১৭তম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস
প্রেস রিলিজ
১৭তম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস
১৫ জুলাই, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০টায় একাডেমিক ভবনের সামনে জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন, প্রশাসনিক ভবনের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হকের প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পন, একাডেমিক ভবন থেকে কর্মসূচী উদ্বোধন ও আনন্দ র্যালি নেতৃত্ব দিবেন উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। সন্ধ্যা ৭ ঘটিকায় কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনা সভা প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি।
শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণ- এই তিন মূল মন্ত্রকে ভিত্তি করে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। ২০০১ সালের ৬ জানুয়ারী বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটের (বিএআই) হিরক জয়ন্তি অনুষ্ঠানে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএআইকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষনা দেন এবং ৯ জুলাই ২০০১ সনে সংসদে আইন পাশ করেন। ১৫ জুলাই ২০০১ সনে তিনি নিজ হাতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে প্রফেসর মোঃ শাদাত উল্লাকে প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে শেকৃবির ইতিহাস ১৬ বছরের হলেও উপমহাদেশের প্রচীনতম উচ্চতর কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে এর ইতিহাস দীর্ঘ ৭৮ বছরের। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মূলত উপমহাদেশের কৃষি ব্যবস্থার ভিত্তি রচিত হয়েছিল।
১৯৩৮ সালের ১১ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা একে ফজলুল হক পূর্ব বাংলার প্রথম কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপন করেন। যার নাম দেওয়া হয় দি বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। পরবর্তীতে এর নাম হয় পূর্ব পাকিস্থান এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধিন হওয়ার পর এর নাম রাখা হয় বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। তবে সর্বসাধারণের কাছে এটি ইনস্টিটিউট হিসেবে পরিচিত না পেয়ে ‘কৃষি কলেজ’ হিসেবেই খ্যাতি লাভ করে। ব্রিটিশ আমলেই এ ইনস্টিটিউট ¯œাতকোত্তর মর্যাদায় লাভ করে। অথচ এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত না করে তৎকালীন পূর্ব বাংলার গভর্নর মোনায়েম খান ও প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিন নিজ ক্ষমতাবলে ১৯৬১ সালে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ১৯৬৪ সালে এ ইনস্টিটিউট কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভূক্ত কলেজ হিসাবে শিক্ষ কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদ, এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদ, এ্যানিম্যাল সায়েন্স ও ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ এবং ফিসারিজ ও একোয়াকালচার অনুষদের ৩৫ াট বিভাগ রয়েছে। স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি তিনটি কোর্স চালু রয়েছে। তিনটি কোর্সে তিন হাজার পাঁচশত শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পাস করে দেশ-বিদেশে কৃষি উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট শিক্ষক সংখ্যা ২২৬, কর্মকর্তা ২১০। শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণার জন্য রয়েছে পাঁচটি খামার । বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে পাঁচটি হল রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ছেলেদের এবং দুটি মেয়েদের জন্য বরাদ্দ। নতুন দুইটি হল নির্মানসহ বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৩শত ৫২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ চলছে। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১ এপ্রিল ২০১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সাল পর্যন্ত।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও ছাত্ররা রিসার্চ সিস্টেম (সাউরেস) এবং ড. ওয়াজেদ মিয়া কে›ন্দ্রীয় গবেষণাগারের মাধ্যমে গবেষণা করে নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করে যাচ্ছেন। তবে এটা অস্বীকার করার জো নেই যে, এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মদক্ষ পেশাজীবী তৈরি করতে সক্ষম হলেও বর্তমানে গবেষণা ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র এ এস এম কামাল উদ্দিন দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিলেন অমৃত কলার চাষ। তিনি পেঁপে ও আনারসের লাগসই চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। ড. নূর মোহাম্মদ মিয়া ও ড. ছিদ্দিক আলীসহ অনেক কৃষিবিদ উচ্চ ফলনশীল ধান বি.আর-৩, বি আর-৪, বিআর-১০, বি আর-১১, বি আর-১৪, বি.আর-১৯, বি.আর-২৩ জাত আবিষ্কার করে শুধু নিজ দেশে নয় প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, পশ্চিম আফ্রিকায় স্বীকৃতি পেয়েছেন। কাজী পেয়ারার জনক ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা এ বিশ্ববিদ্যালযেরই ছাত্র । ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা এবং ড.এস.এম জামান নামে দুজন কৃষি বিজ্ঞানী বাংলাদেশ সরকারের ‘সায়েন্টিস্ট এ্যামিরিটস’ পদে ভূষিত হয়েছিলেন। তাছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কৃষিতে অবদান রাখার জন্য এ প্রতিষ্ঠানের অনেক গ্রাজুয়েট স্বাধীনতা পুরস্কার, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, বিজ্ঞান একাডেমিক স্বর্ণপদক ও শেরেবাংলা পদকসহ বিভিন্ন ধরনের পদক লাভ করেন। আর বর্তমানে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে সাউ সরিষা-১, সাউ সরিষা-২, সাউ সরিষা-৩, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আলুবীজ ও পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সফলতা, মধু চাষ, নন্দিনী ফুল, পরিবেশ সংরক্ষণে ছাদ বাগান, আধুনিক পশুর চিকিৎসার, টমাটিলো, রুকোলা, সাদা ভুট্টা, জামারুসান মূলা, বিভিন্ন বিদেশী ফুলের উৎপাদন সফলতা উল্লেখযোগ্য।
(মোঃ বশিরুল ইসলাম)
জনসংযোগ কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত)
জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতর
শেকৃবি, ঢাকা।
Post Date : 13 Jul, 2017