বিবর্তনে শেকৃবি এলামনাই এসোসিয়েশন
বিবর্তনে শেকৃবি এলামনাই এসোসিয়েশন
প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ
উপাচার্য
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-১২০৭
ও
সভাপতি
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন।
আজকের স্মৃতিচারণ ও ঐতিহাসিক আলোচনা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত করতে হচ্ছে। এ জন্য সকলের নিকট ক্ষমাপ্রার্থী। ১৯৩৮ সনে কৃষকদরদী নেতা তদানীন্তন অভিভক্ত বাংলার মূখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ১১ ডিসেম্বর বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট (বিএআই) এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। প্রথম ব্যাচের গ্রাজুয়েটগণ ১৯৪৩ সনে ডিগ্রি প্রাপ্ত হন। প্রথম ব্যাচের গ্রাজুয়েট মোঃ আবদুস সামাদ স্যারের সাথে বিভিন্ন সময়ে দীর্ঘ আলোচনার সুযোগ হলেও এলামনাই এসোসিয়েশনের বিষয়ে আলাপ করা হয়নি। তাছাড়া পিছনের ইতিহাস নিয়ে বায়োবৃদ্ধদের সাথে বিষদভাবে আলোচনার অবকাশও রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এলামনাই এসোসিয়েশন ছিল এটিই স্বাভাবিক নিয়ম হওয়ার কথা। তবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ এর বিষয় সম্ভবত ১৯৬০ এর দশকেই শুরু। তখনকার সময়ে বর্তমান বি এ আর সি চত্ত্বর ফার্মগেটে একটি টিনসেড ভবনে ইপিআই ওল্ডবয়েজ এসোসিয়েশনের যাত্রা শুরু হয় বলে আমি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি।
ঐ সময় ই পি আই ওল্ড বয়েজ এসোসিয়েশন গঠনের সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাঁদের মধ্যে কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম(ডিএই), মোঃ ইয়াছিন আলী (সাবেক মহা পরিচালক, বাংলাদেশ চিনি গবেষণা ইনস্টিটিউট), ড. হাসান উল্লাহ (সাবেক শিক্ষক, ইপিআই), কৃষিবিদ এম এ জলিল সহ সমসাময়িক অনেক সম্মানিত কৃষিবিদ জড়িত ছিলেন। এ বিষয়ে পরবর্তীতে বিষদ বিবরণ প্রদানের প্রয়াস গ্রহণের ইচ্ছা রয়েছে। ইস্ট পাকিস্তান কৃষি ইনস্টিটিউট (ইপিআই) ওল্ড বয়েজ এসোসিয়েশন পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট (বিএআই) ওল্ড বয়েজ এসোসিয়েশন হিসেবে রূপান্তরিত হয়। তখনকার সময়ের স্বনামধন্য কৃষিবিদগণের নেতৃত্বে এ সংগঠন পরিচালিত হয়েছে। তাঁদের প্রচেষ্টায় এদেশের কৃষি পেশা, কৃষিবিদ ও কৃষি উন্নয়নের সকল দ্বার উন্মোচিত হয়। কৃষিবিদদের কোন ক্লাস বা শ্রেণী ছিলনা। কৃষিবিদদের দ্বিতীয় শ্রেণী এবং প্রথম শ্রেণীর মর্যাদায় উন্নীত করতে বিএআই ওল্ড বয়েজ তথা এলামনাইগণ অনবদ্য অবদান রেখেছেন তা অনস্বীকার্য। এদশের কৃষি শিক্ষা, কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণের ভিত্তি স্থাপনে বিএআই এর গ্রাজুয়েটগণই অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেন। কৃষির উন্নয়নে, কৃষিবিদদের উন্নয়নে, কৃষকের উন্নয়নে তথা দেশের উন্নয়নে বিএআই ওল্ড বয়েজগণ যে অনবদ্য অবদান রেখেছেন সেজন্য আমরা তাঁদের নিকট চিরকৃতজ্ঞ।
পরবর্তীতে ওল্ড বয়েজ এসোসিয়েশনের ধারাবাহিকতায় ও নেতৃত্বে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ স্থাপনের সূচনা হয়। যা বর্তমান কে আই বি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। ১৯৮০ সালে কে আই বি যাত্রা শুরু করে ওল্ড বয়েজ এসোসিয়েশনের অন্যতম সদস্য কৃষিবিদ মোঃ শহীদুল ইসলাম (সাবেক মহাপরিচালক, ডিএই এবং সচিব) এর নেতৃত্বে। এ কার্যনির্বাহী কমিটির মহাসচিব ছিলেন কৃষিবিদ ড. মির্জা এ জলিল (সাবেক মহাপরিচালক, ডিএলএস ও সচিব, বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের এলামনাই)। এদিকে বিএআই ওল্ড বয়েজ এসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ ও এলামনাইগণও যুগপৎ তাঁদের কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে থাকেন। বি এ আইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় বিভিন্ন সময়ে যার নেতৃত্বেও ছিলেন ওল্ড বয়েজ তথা এলামনাইগণ। বিএআই এর স্বায়ত্তশাসনসহ এর বিভিন্ন রকম উন্নয়নে এলামনাইগণ সদাসর্বদা সহায়তা প্রদান করতে থাকেন। কৃষিবিদ মোঃ মহবুবউজ্জামান (সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও ক্যাবিনেট সেক্রেটারী) দীর্ঘ সময় ওল্ড বয়েজ এসোসিয়েশন এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন কৃষিবিদ আঃ ওহাব এবং কৃষিবিদ ড. গুল হোসেন।
পরবর্তীতে ১৯৯৭ সন হতে ২০০৩ সন পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন কৃষিবিদ মোঃ মহবুবউজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন প্রফেসর মোহাম্মদ হোসেন ভূঁঞা (শেকৃবি)। ২০০০ সনে ওল্ড বয়েজ এসোসিয়েশনের এক সভায় (যার সভাপতি ছিলেন কৃষিবিদ মহবুবউজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মোহাম্মদ হোসেন ভূঁঞা) আমি বিএআইকে বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেটি গৃহীত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট জ্যেষ্ঠ কৃষিবিদদের কর্তৃক প্রেরীত আবেদন পত্রটি এলামনাই কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দীন নাছিম এর সক্রিয় সহযোগিতা ও চেষ্টায় বিবেচিত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সনের ৬ জানুয়ারী বি এ আইকে বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষণা দেন এবং ২০০১ সনের ৯ জুলাই সংসদে শেকৃবি আইন ২০০১ পাস হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে ১৫ জুলাই ২০০১ সনে শেকৃবিএর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৩ সনের ২০ জুন বিএআই ওল্ড বয়েজ এসোসিয়েশনের এক সাধারণ সভায় এর নাম সর্ব্বসম্মতিক্রমে শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়। আমি শেকৃবি আইনের খসড়া তৈরি করার সময় বিএআই এর ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, সহায় সম্পদ, দায়দেনা ইত্যাদি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভূক্ত হবে মর্মে আইনে উল্লেখ করেছিলাম, যা চূড়ান্তভাবে সংসদে পাস হয়। সে কারণে সকল বাধা অতিক্রম করে আমরা কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
তৎকালীন উপাচার্য ও কিছু ব্যাক্তি এর বিরোধিতা করলেও চূড়ান্তভাবে এলামনাই এসোসিয়েশন স্বীকৃতি পায়। আমরা একটি গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করি এবং সে আলোকে শেকৃবি এলামনাই এসোসিয়েশনের প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয় (২০০৩-২০০৫ মেয়াদের জন্য)। প্রথম কমিটির সভাপতি ছিলেন কৃষিবিদ মোঃ মহবুবউজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কৃষিবিদ মাহমুদ হোসেন। এরূপ ২০০৬-২০০৭ সনেও একই কমিটি দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু ফেব্রুয়ারী ২০০৮ সনে কৃষিবিদ মোঃ মহবুবউজ্জামান ইন্তেকাল করায় কৃষিবিদ ড. এইচ এম মোশাররফ হোসেন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮-২০০৯ মেয়াদে কৃষিবিদ ড. এ এইচ মোশাররফ হোসেন সভাপতি ও কৃষিবিদ মাহমুদ হোসেন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
২০১০-২০১১, ২০১২-২০১৩, ২০১৪-২০১৫, ও ২০১৬-২০১৭ মেয়াদের সভাপতি ছিলেন প্রফেসর মোঃ শাদাত উল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কৃষিবিদ এ এম এম সালেহ। ২০১৮-২০১৯ মেয়াদের সভাপতি কৃষিবিদ প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ ও মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কৃষিবিদ মেজবাহ উদ্দীন। আমি ১৯৮১ সনের ২৯ অক্টোবর প্রভাষক হিসেবে যোগদানের পর হতেই বিএআই ওল্ড বয়েজ এসোসিয়েশনের সভায় অংশগ্রহণ করেছি। শিক্ষক সমিতিতেও সদস্য, সাধারণ সম্পাদক, সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি বহুবার। আমি প্রথম কমিটির (২০০৩-২০০৫) এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পরের দুই কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক এবং ২০১০-২০১৭ মেয়াদের কমিটিসমূহে সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।
ভবিষ্যতে আরো বিস্তৃত বর্ণনা প্রদানের প্রচেষ্টা নেয়া হবে, এ আশা করছি। স্থানাভাবে এলামনাই এসোসিয়েশনের সকল সদস্যবৃন্দের বিবরণ দেয়া সম্ভব হলো না, সকলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ রইলো। শেকৃবিতে এলামনাই এসোসিয়েশন অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও সুনামের সাথে বিশ^বিদ্যালয় ও জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এ কামনা করছি। সাথে সাথে এতদসংক্রান্ত আরো তথ্য পাওয়ার আশা করছি। বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষিবিদদের প্রতি এ আহ্বান রাখছি।
Post Date : 28 Apr, 2019